বৃহস্পতিবার, জুন ২১, ২০১২

“তারা আমার বাবাকে মন্দির থেকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে,


১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা করেন বলে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে বলেছেন নিহতের ছেলে।

প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সাক্ষ্যে বলেন, বাবাকে নৃশংসভাবে হত্যার কথা আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাকে জানিয়েছিলেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে নূতন চন্দ্র নিজে দেশে থেকে গেলেও সন্তানদের ভারতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।

বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে পঞ্চম সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন সত্তরোর্ধ্ব প্রফুল্ল।

তিনি বলেন, একাত্তরের ১৩ এপ্রিল সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পাকিস্তানি সৈন্যদের সঙ্গে নিয়ে কুণ্ডেশ্বরীতে তাদের বাসভবনে ঢুকে তার বাবাকে হত্যা করেন।

“তারা আমার বাবাকে মন্দির থেকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে, তিনি তখন ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তাকে তিনটি গুলি করেন।”

ব্রজহরি নামের নূতন চন্দ্রের এক শুভান্যুধায়ীর কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা শোনার কথা ট্রাইব্যুনালকে জানান প্রফুল্ল।

“ব্রজহরি সেখানে ছিলেন এবং বাড়ি ছাড়ার জন্য বাবাকে তিনি বোঝাচ্ছিলেন। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও পাকিস্তানি সৈন্যরা বাড়িতে ঢুকলে লুকিয়ে পড়েন ব্রজহরি। তিনি এমন এক জায়গায় লুকিয়ে ছিলেন, যেখান থেকে সব দেখতে পেয়েছিলেন।”

এর আগে গত ৪ জুন আরেক সাক্ষী ট্রাইব্যুনালে জানান, তিনি সালাউদ্দিন কাদেরকে পাকিস্তানি সৈন্যদের নিয়ে কুণ্ডেশ্বীতে ঢুকতে দেখেন এবং এরপরই গুলির শব্দ পান।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে নূতন চন্দ্র সিংহ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরীর রোষানলে পড়েন বলে দাবি করেন প্রফুল্ল।

পাকিস্তান গণপরিষদের স্পিকার ও মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদেরকে স্বাধীনতার পর বন্দি করা হয়েছিল। কারাগারে থাকা অবস্থায়ই মৃত্যু হয় তার।

চট্টগ্রামের রাউজানে কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয় ও কুণ্ডেশ্বরী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা নূতন সিংকে হত্যাসহ একাত্তরে মানবতাবিরোধী ২৩টি অপরাধের ঘটনায় সালাউদ্দিন কাদেরের বিচার চলছে।

প্রফুল্ল চন্দ্র সিং জানান, ১৯৭০ এর নির্বাচনে মুসলিম লীগের ভরাডুবির পর থেকে ফজলুল কাদের চৌধুরী তার বাবাকে হুমকি দিয়ে আসছিলেন।

“আমরা ছিলাম সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায়। প্রতি নির্বাচনের আগে ফজলুল কাদের চৌধুরী ওই এলাকায় আসতেন এবং বলতেন ‘তোমরা ভোট দেবে, ঠিক...তাই তোমরা ভোট কেন্দ্রে যেয়ো না। তাহলেই আমি বুঝব, তোমরা আমাকে ভোট দিয়েছ।”

“কেউ তার নির্দেশ অমান্য করলে আমাদের ওপর নির্যাতন করা হতো,” বলেন তিনি।

১৯৭০ সালের নির্বাচনের আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাউজানে গিয়ে নূতন চন্দ্র সিংহের বাড়িতে গিয়েছিলেন। এতেও ফজলুল কাদের চৌধুরী ক্ষুব্ধ হন বলে জানান প্রফুল্ল।

মুসলিম লীগের প্রার্থী ফজলুল কাদের চৌধুরী সত্তরের ওই নির্বাচনের আগের রাতে তিনবার তাদের এলাকায় যান বলে জানান তিনি।

প্রফুল্ল ট্রাইব্যুনালে বলেন, ফজলুল কাদের তার বাবাকে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক উচ্চারণে বলেছিলেন, “তুমি কি পাগল হয়ে গেছ?”

গত বছরের ১৪ নভেম্বর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উত্থাপন করে প্রসিকিউশন। এর তিনদিন পর অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। ২০১০ সালের ২০ ডিসেম্বর একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের মামলায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এর পাঁচ দিন আগে অন্য একটি মামলায় গ্রেপ্তার হন তিনি।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন