শনিবার, আগস্ট ০৪, ২০১২

ঈদের বাজার পুরাদমে জমে উটেছে জহুর হকার্স মার্কেট



মুহাম্মাদ ইসরাফিল মোল্লা; মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় লেগেই আছে। যেন জনতার স্রোত। বিকিকিনিও চলছে দেদার। এক সময় এটি ছিল নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তের মার্কেট। কিন্তু এখন আর সে অবস্থা নেই। বর্তমানে উচ্চবিত্ত ও অভিজাত শ্রেণীর ক্রেতারাও ভিড় করছেন।
মার্কেটে সকল শ্রেণীর ক্রেতাদের যাতায়াত। ছোট, বড়, নারী পুরুষ সকলের পছন্দের কাপড় চোপড় রয়েছে এখানে। ঈদ আর বেশী দেরি নাই তাই পুরোপুরি বিকিকিনি শুরু হয়ে গেছে। ঈদ উপলক্ষে দোকানে তোলা হয়েছে নতুন নতুন ডিজাইনের হরেক রকমের পোষাক। দোকানিদের কথা বলার ফুসরৎ নেই। নিচে চলছে বিকিকিনি, আর উপরে চলছে প্যান্ট শার্ট সেলাইয়ের কাজ। আদালত ভবনের পাশে পরীর পাহাড়ের নিচে জহুর হকার্স মার্কেটের অবস্থান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারের শ্রম মন্ত্রী  বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা জহুর আহমদ চৌধুরীর নামে এ মার্কেটের নামকরণ করা হয়। স্বাধীনতাত্তোরকালে মাত্র ৮টি দোকান নিয়ে এ মার্কেটের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে এ মার্কেটে দোকানের সংখ্যা ৮শএকসময় এটি গরীবদের মার্কেট হিসেবে পরিচিত ছিল। পুরাতন কাপড় এনে এখানে বিক্রি করা হত। সেসময় এ মার্কেটকে টাল কোম্পানিহিসেবে আখ্যায়িত করা হতো। মার্কেটের দোকানগুলোতে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পুরাতন গরম কাপড়, শার্টসহ নানা ধরনের পোষাক বিকিকিনি হতো। শুধু দোকানে নয়, বাজারের পশ্চিম পাশে খোলা জায়গায় স্ত্তপ করে রেখে কাপড় বিক্র করা হতো। সময়ের তালে তালে দিন বদলেছে। এখন আর পুরাতন কাপড় পাওয়া যাবে না। সবই ঝকঝকে তকতকে দামি কাপড়। পাওয়া যায় হরেক রকমের কাপড় চোপড়। এ মার্কেটে দুপাশে দুটি প্রধান গলি রয়েছে। মাঝে রয়েছে আরো ১০/১২টি উপ-গলি। প্রতিটি দোকানে নতুন ডিজাইনের কাপড় তোলা হয়েছে। বড়দের শার্ট, প্যান্ট, ছোটদের জিন্সের প্যান্ট, বেল্ট, বাচ্চাদের নানা ধরনের পোষাক, মেয়েদের সেলোয়ার কামিজ, ওড়না ইত্যাদি রয়েছে এ মার্কেটে। এখানে বাচ্চাদের পোষাকই বেশি দেখা গেছে। শীত কালে যেসব দোকানে শীতের পোষাক বিক্রি হতো, সেসব দোকানে ঈদ উপলক্ষে হরেক রকমের পোষাক তোলা হয়েছে। ঈদের পর আবারো পাল্টে যাবে এসব দোকানের চেহারা। আগের অবস্থায় ফিরে যাবে দোকানগুলো। প্যান্টের কাপড়ের  শতাধিক দোকান রয়েছে। ক্রেতারা এসব দোকান থেকে কাপড় কিনে সেলাই করতে দেন। প্যান্ট সেলাইসহ প্রতিটি কাপড়ের দাম নেয়া হয় ৫শথেকে ৭শটাকা। এবার বিভিন্ন দামের পোষাক তোলা হয়েছে দোকানগুলোতে। বড়দের শার্ট ৪শথেকে ৮শটাকা, প্যান্ট সেলাইসহ ৭শথেকে দেড় হাজার টাকা, সেলাই ছাড়া ৪শথেকে ৮শটাকা, মেয়েদের সেলোয়ার কামিজ ৫শথেকে দের হাজার টাকা, বাচ্চাদের মধ্যে ছেলেদের প্যান্ট ১০০ থেকে ৪০০ টাকা, শার্ট ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা, মেয়েদের পোষাক ১শথেকে ৭শটাকা দরে বিক্রি হচ্ছে এখানে। কোন কোন দোকানে এর চাইতেও বেশি দামে পোষাক বিকিকিনি হতে দেখা গেছে। দেখা যায়, পুরনো, অকেজো বা পুরনো বিভিন্ন ধরনের পোষাক এক দামে বিকিকিনি হচ্ছে। এসব পোষাক স্ত্তপ করে রাখা হয়েছে। দোকানের সামনে রাখা হয়েছে এসব পোষাক। এগুলো ৩০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত দাম হাঁকা হচ্ছেহকার্স মার্কেটের ইমরান সামি বলেন, তার দোকানে বিকিকিনি এখন বেশ ভাল। অন্যান্য সময়ের চাইতে তা ৬/৭ গুণ বেশি। রোজা ১৫টির পর তা আরো বাড়বে বলে তিনি জানান। গত বছরের চাইতে দাম বেশী কেন জিজ্ঞাস করা হলে তিনি জানান সব কিছুর দাম বেশী আমরা ও বেশী দামে কিনে এনেছি এই জন্য আমরা কম দামে বিক্রি করতে পারিনা। সে আরও বলে আমরা বেশী লাভের কথা ভাবিনা আল্প লাভে আমরা বিক্রি করে দিচ্ছি। কিন্তু ক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। 
ব্যবসায়ী মুহাম্মাদ আব্দুল মোতালিব গেছেন তার জন্য মার্কেট করতে। তিনি জানান, প্রতিটি পোশাক এর দামই বেশি। কয়েকগুণ বেশি দাম হাঁকা হচ্ছে। তাতে ক্রেতারা বিভ্রান্ত হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, এখানে দরদাম করতে না জানলে ঠকতে হয়। কারণ দোকানিরা দাম হাঁকেন কয়েকগুণ বেশি। বাচ্চাদের ৫০ টাকার কাপড়ের দাম হাঁকা হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। বড়দের শার্টের দাম দেয়া হয় ৮/৯শটাকা। অথচ বিক্রি করা হয় ৩/৪শটাকায়। যারা দরদাম করতে অভ্যস্ত নন, তারা নির্ঘাত ঠকবেন। দোকানিরা ক্রেতা বুঝে দাম হাঁকেন। দেখা যায়, পুরো মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় লেগেই আছে। বিশেষ করে বিকাল থেকে ভিড় বাড়তে থাকে। সন্ধ্যার পর তা আরো কয়েকগুণ বাড়ে। অবশ্য রমজানের চেহারা একটু ভিন্ন। (৩আগস্ট) দেখা যায়, মার্কেটের প্রতিটি দোকানে ক্রেতাদের ভিড়। মার্কেটের গলি উপ-গলি দিয়ে হাঁটা চলাও দায় হয়ে পড়েছে। বিকিকিনিও হচ্ছে দেদার। বাচ্চাদের পোষাক বিক্রির হার সবচেয়ে বেশি বলে জানালেন এক দোকানি। ব্যবসায়ীরা জানান, একসময় এ মার্কেটে চাঁদাবাজদের অত্যাচারে ব্যবসা করা দুরূহ ছিল। সারা বছরতো চাঁদা দিতে হতোই, ঈদ আসলে চাঁদার হার কয়েকগুণ বেড়ে যেত। কিন্তু সে পরিস্থিতি আর নেই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন