মুহাম্মাদ ইসরাফিল মোল্লা:ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানে উচ্ছ্বাস, ঈদ মানে দুঃখ ভুলে যাওয়ার দিন। এমন দিনে হারিয়ে যেতেও যেন নেই মানা! ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে প্রতি বছর থাকে নানা আয়োজন। প্রতিবারের মতো বাঁধভাঙা আনন্দ-উচ্ছ্বাস নিয়ে এবারও রমজানের শেষে আসছে ঈদ। খুশির ঈদে আনন্দ ভাগ করে নিতে নগরবাসীকে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, ফয়'স লেক এবং ওয়াটার পার্ক সি ওয়ার্ল্ডসহ নগরীর পর্যটন স্পটগুলো। এসব পর্যটন স্পটে সপ্তাহব্যাপী থাকে ঈদ উৎসবের আমেজ। এসব পর্যটন স্পটে গিয়ে নগরবাসীও যেন খুঁজে পান ঈদের বাড়তি আনন্দ।
'ও মোর রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ'_ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত এ গান দিয়েই যেন প্রতি বছর ঈদকে বরণ করে নেন সবাই। রমজানের প্রথম দিন থেকেই ঈদের জন্য অপেক্ষার পালা শুরু হয়। সেই প্রতীক্ষার অবসান ঘটে শেষ রোজার পর। রমজানের পুরো মাসব্যাপী তাই ঈদানন্দের আবহ বিরাজ করে। কীভাবে ঈদের আনন্দ উপভোগ করা হবে তা নিয়ে চলে নানা পরিকল্পনা। নগরীর পর্যটন স্পটগুলোতে বেড়ানোর ভাবনাও থাকে নগরবাসীর সেই পরিকল্পনায়। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদানন্দ আরও ভালোভাবে উপভোগ করতে নগরীর মানুষ ভিড় করেন পর্যটন স্পটগুলোতে। ঈদের দিনসহ পরবর্তী প্রায় সপ্তাহব্যাপী নগরীর পর্যটন স্পটগুলোতে মানুষের উপচেপড়া ভিড় থাকে। বিশেষ করে ফয়'স লেক এবং ওয়াটার পার্ক সি ওয়ার্ল্ডে প্রতি বছর মানুষের ঢল নামে।
সমুদ্রের তীরে যেতে কার না ভালো লাগে! নগরবাসীরও অন্যরকম ভালো লাগার জায়গা এটি। যে কোনো উৎসবে নগরবাসী ছুটে যায় সাগরপানে। সারা বছরই পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে মানুষের পদচারণা থাকে। তবে ঈদ এলে এখানে মানুষের ঢল নামে। সাগরপাড়ে দাঁড়িয়ে সূর্য ডোবার দৃশ্য উপভোগ করা দারুণ আনন্দের। তাই ঈদের বিকেলটা অনেকেই কাটাতে চান পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে। অবশ্য সন্ধ্যাটা ভীষণ উপভোগ্য হয়ে ওঠে নেভাল একাডেমীর পাশে কর্ণফুলী মোহনার তীরে। এখানে বছরের বন্ধের দিনগুলোতে থাকে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস। সন্ধ্যার পর তরুণ-তরুণীরা এই কর্ণফুলী মোহনার তীরে এসে মেতে ওঠেন জম্পেশ আড্ডায়। ঈদের দিন সন্ধ্যায়ও এখানে তরুণ-তরুণীদের ভিড় জমে।
চট্টগ্রামে ঈদোৎসবে মেতে ওঠার অন্যতম পর্যটন স্পট হচ্ছে ফয়'স লেক। শুধু চট্টগ্রামের অন্যতম পর্যটন স্পটই নয়, ফয়'স লেক দেশেরও অন্যতম একটি পর্যটন স্পট। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও কৃত্রিম সৌন্দর্যের সমন্বয় ঘটিয়ে কনকর্ড গ্রুপ ফয়'স লেককে অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটে পরিণত করেছে। অথচ শুরুতে এটি পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে ওঠেনি। এই লেকের জন্ম হয়েছিল পানি পাওয়ার জন্য। ব্রিটিশ শাসনামলে মিস্টার ফয় নামের এক ইংরেজ সুপেয় পানির জন্য পাহাড়তলীর পাহাড় কেটে জলাধার তৈরি করেন। তার এ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ওই জলাধারাটির নামকরণ করা হয় ফয়'স লেক। অবশ্য ব্রিটিশ আমলের সেই ফয়'স লেকের সঙ্গে বর্তমান ফয়'স লেকের কোনো মিল নেই। কনকর্ড গ্রুপ ফয়'স লেকের চেহারায় আমূল পরিবর্তন এনেছে। এ কারণে শিশু থেকে শুরু করে তরুণ-বৃদ্ধ সববয়সী মানুষের প্রিয় নাম ফয়'স লেক।
কনকর্ড গ্রুপ এই ফয়'স লেকে গড়ে তুলেছে কনকর্ড অ্যামিউজমেন্ট ওয়ার্ল্ড, যা শিশুদের আনন্দ রাজ্য বলে বিবেচিত। এখানে রয়েছে বিভিন্ন রাইডস_ বাম্পার কার, ফ্যামিলি রোলার কোস্টার, পাইরেটশিপ, কফি কাপ, ড্রাই স্লাইড, ফেরিস হুইল, হ্যাপি জাম্প ও বেবি ফেয়াওসাল।
প্রকৃতির সানি্নধ্যে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য এখানে রয়েছে নিরিবিলি সবুজ পরিবেশ। লেক ঘুরে দেখার জন্য নৌ ভ্রমণের ব্যবস্থাও রয়েছে। লেকের স্বচ্ছ জলরাশি আর দু'পাশে সংরক্ষিত সবুজ জঙ্গল দেখতে দেখতে কখন যে আনমনা হয়ে পড়বেন টেরই পাবেন না। সবমিলিয়ে নগরজীবনের কোলাহল থেকে দূরে থাকতে ফয়'স লেক অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। এদিকে ঈদ উপলক্ষে ফয়'স লেকে প্রবেশ করলেই দেওয়া হবে লাকি কুপন। ভাগ্য ভালো থাকলে পেয়ে যেতে পারেন ফ্রিজ, টিভি কিংবা মোবাইল সেট। এছাড়াও ১৭ সেপ্টেম্বর ফয়'স লেকে থাকবে জনপ্রিয় শিল্পীদের নিয়ে কনসার্ট।
তরুণ-তরুণীদের কাছে চট্টগ্রামের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান বলে বিবেচিত হয় ওয়াটার পার্ক সি ওয়ার্ল্ড। দেশের সর্ববৃহৎ ওয়াটার পার্ক সি ওয়ার্ল্ডে অনেক মজার মজার রাইডস রয়েছে। স্লাইড ওয়ার্ল্ড, টিউব স্লাইড, মাল্টি স্লাইড, ডোম স্লাইড, ওয়েবপুল, ফ্যামিলি পুল, পেল্গ-জোন, ড্যান্সিং জোনসহ রয়েছে অনেককিছু। এর চেয়ে যেন মজার জায়গা ওয়েভপুল। সাগরের ঢেউয়ের মতো কৃত্রিম ঢেউ খেলে এখানে। আর সেই ঢেউয়ে নেচে-গেয়ে ওঠেন আগতরা। এখানে সারাদিন পানি নিয়ে খেলা করাটা অন্যরকম এক ভালো লাগার অনুভূতি এনে দেয়।
ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে সপ্তম দিন পর্যন্ত ওয়াটার পার্ক সি ওয়ার্ল্ডে চলবে ডিজে শো। তাই নিঃসন্দেহে বলে দেওয়া যায়, ঈদের আনন্দ আরও পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করতে মানুষের ঢল নামবে এই সি ওয়ার্ল্ডে। এছাড়া ঈদের লম্বা ছুটি ঘরের বাইরে কাটানোর পরিকল্পনা রয়েছে যাদের তাদের জন্য রয়েছে ফয়'স লেক রিসোর্ট। মনোরম পরিবেশে সময় কাটানোর আদর্শ স্থান এটি। প্রকৃতি ও আধুনিকতার সমন্বয় ঘটেছে যেন ফয়'স লেক রিসোর্টে। এখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রতিটি কক্ষের সঙ্গে রয়েছে ব্যালকনি। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যাবে হ্রদ, পাহাড়ের অপার সৌন্দর্য। এখানে থেকেই চেখে নিতে পারেন দেশি-বিদেশি মজাদার খাবার। নগরবাসীকে বাড়তি আনন্দে মাতিয়ে রাখতে ঈদে ফয়'স লেক ও সি ওয়ার্ল্ডে বিশেষ আয়োজনের কথা উলেল্গখ করে কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট
লিমিটেডের সহকারী ম্যানেজার (মার্কেটিং) বিশ্বজিৎ ঘোষ
সাংবাদিককে বলেন, 'নগরবাসীর মধ্যে ঈদানন্দ ছড়িয়ে দিতেই ফয়'স লেক ও সি ওয়ার্ল্ডে কনসার্ট ও ডিজে শোসহ বিশেষ আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঈদের আনন্দ যাতে সবাই প্রাণভরে উপভোগ করতে পারেন সেজন্যই বিশেষ এ আয়োজন।'
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন